
নিজস্ব প্রতিবেদক
২৯ জুলাই, ২০২৫, 5:10 PM

মাউশিতে বদলি বাণিজ্য ও ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকরি কেলেঙ্কারিতে নতুন সিন্ডিকেট অহিদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু
২৯জুলাই ২০২৫ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)—যা ‘শিক্ষাভবন’ নামেও পরিচিত—বছরের পর বছর ধরে দুর্নীতি ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে আলোচিত। সম্প্রতি একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকরি, বদলি বাণিজ্য ও চাঁদা আদায়ের বিস্তৃত অভিযোগ উঠে এসেছে। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মাউশির একজন প্রশাসনিক কর্মচারী, সাঁটলিপিকার পদে কর্মরত অহিদুর রহমান। ভোল পাল্টানো এক কর্মচারীর উত্থান সূত্র জানায়, অহিদুর রহমান একসময় ছিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। ১৯৯৮ সালে কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ.ফ.ম বাহার উদ্দিন বাহারের সুপারিশে ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদের মাধ্যমে মাউশিতে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে আওয়ামীপন্থী গোপালী সিন্ডিকেটের ছত্রছায়ায় দাপটের সাথে কাজ করেন দীর্ঘদিন। তবে ৫ আগস্ট ২০২৪ পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক সুবিধার জন্য তিনি জাতীয়তাবাদী আদর্শে ‘ভোল পাল্টান’। নতুনভাবে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ব্যবহার করছেন শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া ও ঢাকা অফিসার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এ বি এম আব্দুস সাত্তারের নাম। এদের ছত্রছায়ায় তিনি এখন গুরুত্বপূর্ণ বদলি ও নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বদলি বাণিজ্যের সিন্ডিকেট বিভিন্ন অভিযোগে জানা যায়, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষা অফিসার ও কর্মচারীদের বদলির জন্য প্রতি জন থেকে ১-৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হচ্ছে। একটি শাখা বদলির জন্য জনপ্রতি ১ লক্ষ টাকা, আর গুরুত্বপূর্ণ কলেজ ও অফিস পদে পদায়নের জন্য ৫-১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চাওয়া হয়। মাউশির ভেতরেই গড়ে উঠেছে একটি বিশেষ সিন্ডিকেট, যেটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন অহিদ। এই সিন্ডিকেটে রয়েছেন আইন শাখার কম্পিউটার অপারেটর শাহজাহান, অডিট শাখার জামান হোসেন, পরিকল্পনা শাখার পরিচালকের পিএ মোবারক উল্লাহ মিঠু, মেহেদী হাসান, শিবলী মোল্লা, রাজিব ও কাইউমসহ একাধিক কর্মচারী। চাঁদা ও নিয়োগ বাণিজ্য শুধু বদলিই নয়, অভিযোগ আছে যে, ভুয়া নিয়োগ ও আটকে থাকা এমপিওভুক্তির কাজও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে করে দিচ্ছেন অহিদ চক্র। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্তির জন্য নেয়া হয় ২-৩ লক্ষ টাকা। আর সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের জন্য ডিলিং ক্লার্কদের মাধ্যমে চাঁদা তোলারও অভিযোগ রয়েছে। তিতুমীর কলেজে হিসাবরক্ষক পদে ৫ লক্ষ টাকা নিয়েও এখনো নিয়োগ না হওয়ায় ভুক্তভোগীরা প্রতিকার পাচ্ছেন না। এমনকি টাকা ফেরতও দেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। পুরনো অভিযোগের ইতিহাস অহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে অতীতে একাধিক অভিযোগ তদন্তাধীন। ২০০৮ সালে ঢাকার বাইরে বদলি, ২০০৯-১০ সালে শিক্ষক বদলিতে দুর্নীতি, এবং ২০১৪ সালে ফাহিমা খাতুন ডিজি থাকাকালে বিভাগীয় মামলাও হয়। এমনকি এমপিও দুর্নীতির ঘটনায় ২০১৮ সালে ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) তদন্ত করে কুমিল্লা অঞ্চলে তাকে সিন্ডিকেট প্রধান হিসেবে চিহ্নিত করে। দুদক থেকেও তদন্তের সুপারিশ করা হয়, তবে আজও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তদন্ত শুরু হলেও গতি ধীর বর্তমানে মাউশির পরিচালক (মনিটরিং) এর নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তবে insiders বলছেন, ক্ষমতাবানদের পৃষ্ঠপোষকতায় তদন্তের গতি অনেক ধীর। উপসংহার মাউশির মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানে বারবার সিন্ডিকেটের দাপট এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দুর্নীতি বন্ধ না হলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রকৃত মানোন্নয়ন অসম্ভব হয়ে উঠবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উচিত, এইসব চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং তদন্ত কার্যক্রম স্বচ্ছভাবে শেষ করা।