নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কে এম ইব্রাহিম খলিল
আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় মটর সাইকেল বা হোন্ডা বা বাইক হলো কম-দূরত্বে চলাচলের ক্ষেত্রে চমৎকার একটি বাহন। এককভাবে কিংবা যৌথভাবে সময়ে কিংবা অসময়ে কিংবা বিশেষ কোনো মূহুর্তে ¡এটি বেশ ভালো উপকারী একটি বাহন বলে আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় এটি বহুল স্বীকৃত।
বর্তমান চলমান সমাজ ব্যবস্থায় এই বাহনটি অনেকের জন্য আয়েরও একটি চমৎকার মাধ্যমও হয়ে উঠেছে ইতোমধ্যে। অর্থাৎ রুটি-রুজির একটি স্বীকৃত মাধ্যম হিসেবেও আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় এটির কদর বাড়ছে, বৈকি!
কিন্তু একইসাথে জনমনে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে যে, এই বাইক এবং বাইকাররা সমাজে অশান্তিরও বিরাট একটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে আইন-কানুন অমান্য এবং ট্রাফিক আইন অমান্য করতঃ দিনের পর দিন এই বাইকাররা এতো বেশী বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, ঢাকা মহানগরী ইতোমধ্যে রীতিমত একটি আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হয়ে উঠেছে!
ঢাকা মহানগরীতে যানজট সৃষ্টির অন্যতম একটি প্রধান কারণ হলো এই বাইক এবং বাইকাররা। আরো কিছু কারণও আছে; তাহলো রিক্সাগুলো- বিশেষ করে ইজি-বাইক তথা অটো গাড়ীগুলোও যানজট সৃষ্টির একটি অন্যতম কারণ বলে সংশ্লিষ্ট ভূক্তভোগীগণ মনে করছেন। তবে সবচেয়ে বেশী অর্থাৎ যাটজটের প্রধানতম কারণ হলো হোন্ডা নামক মটর-সাইকেলের চালকরা, যাদেরকে বাইক-চালক বা বাইকারও বলা হয়।
এই বাইক চালক বা বাইকাররা এতোই বেপরোয়া যে, কোনো আইন’ই তারা মানতে নারাজ। নিয়ম-কানুন কিংবা আইন কোনটারই তোয়াক্কা করেনা বেপরোয়া বাইক চালকরা। মহানগরীর অলিতে-গলিতে লক্ষ লক্ষ বাইক চালকরা মনে করে রাজধানী শহরটির সকল রাস্তাগুলো তাদেরই কেনা কিংবা কেবল তাদেরই বাপ-দাদার সম্পদ। এ কথাটি পেশাদার বাইক চালক (ভাড়ায় চালিত) কিংবা অপেশাদার বাইক চালক (ব্যক্তিগত) উভয়ের ক্ষেত্রেই বিষয়টি প্রযোজ্য। সাধারণ মানুষের চলাচল তথা হাটার রাস্তা অর্থাৎ ফুটপাত কিংবা চিকন গলি যাহাই হউক, এরা থামতে নারাজ। রাস্তার ট্রাফিক সিগনাল কিংবা যানজট এর সময়- কোন ক্ষেত্রেই এদেরকে থামানো যাচ্ছেনা। কেউ এদেরকে বারণ করলেও থামতে চায়না এবং এরা কারণে-অকারণে কঠিন ঝগড়ায়ও লিপ্ত হয়। এরা পুলিশকেও মানতে নারাজ এবং মানেও না। সামান্য একটু ফাঁক পেলেই এবং সিগনাল চলাকালেই কিংবা জ্যামের মধ্যেও পুলিশের সামনেই পুলিশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাস্তা পার হতে বাইক চালিয়ে এগিয়ে চলে এবং আরো বেশী বেশী জ্যামের সৃষ্টি করে। দেখে-শুনে মনে হচ্ছে পুলিশও এদেরকে ভয় করে, কারণ পুলিশও এদেরকে কিছু বলেনা।
ট্রাফিক আইন, ট্রাফিক সিগনাল কিংবা যানজট এর সময় সবাই দাঁড়িয়ে যায়। দাঁড়িয়ে যায় বললে ভুল হবে, দাঁড়িয়ে যেতে বাধ্য হয়। কিন্তু বাইক চালক বাইকাররা তখনও রাস্তার ফুটপাতে উঠে বাইক চালিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে থাকে, এতে ফুটপাতে পায়ে হাটা লোকজনের যে ভীষণ অসুবিধা হয়, সেটারও কোনো তোয়াক্কা না করে, বরং তীব্র হর্ণ বাজিয়ে ফাঁক-ফোকর দিয়ে এগিয়ে চলতে থাকে। সরু গলিতে দুটো ছোট গাড়ী যেখানে চলাচল করতে অসুবিধা হয়, সেখানে বিভিন্ন কারণে যানজট চলমান অবস্থায় রাস্তার উল্টো দিকের গাড়ী আসার রাস্তা দিয়েই বাইকাররা এগিয়ে যায়, এতে ঐ পথের গাড়ীগুলোরও আসতে যেমন অসুবিধা হয় এবং জ্যামের সৃষ্টি হয়; পাশাপাশি একই দিকের গাড়ীগুলোও আটকে যায়। তা’ছাড়া ঐ বাইক বা বাইকাররা সামনে গিয়ে কোন মোড়ে গিয়ে বাইকগুলো আছড়ে পড়ে। এভাবে চার-রাস্তা মোড়ে চারদিক হতে ঐ অযাচিত বাইকগুলো বা বাইকাররা আসার কারণে রাস্তায় চতুর্মুখী প্রচন্ড জ্যামের সৃষ্টি হয়। এই কারণেই কোনো গাড়ীই সামনে এগুতে পারেনা।
আর রাস্তা ফ্রী পেলে এই বাইকাররা এতোই বেপরোয়া গতিতে গাড়ী চালায় যে প্রায়শঃই দূর্ঘটনার কারণ হিসেবে এই বাইকাররাই প্রধাণতঃ দায়ী হয়। অনেক সময় তারা নিজেরাও মরে কিংবা মারাত্বক পঙ্গুত্ব বরণ করে; আর বেশীর ভাগ সময় সাধারণ পথচারীকে মারে কিংবা মারাত্বক পঙ্গুত্ব বরণ করতে বাধ্য করে। এর ফলে সমাজে অসহায় বেকারত্বেরও সৃষ্টি করে এই বাইকাররা।
ট্রাফিক আইন এবং রাস্তার নিয়ম-কানুন না মানার কারণে এখনই বাইক এবং বাইকারদের বিরুদ্ধে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের দায়ে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে বিষয়টি নিয়ন্ত্রয়নের বাহিরে গিয়ে যেকোন সময় গণবিস্ফোরন ঘটাতে পারে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অর্থাৎ পুলিশ এবং প্রশাসন যদি এ বিষয়ে এখনই সতর্ক না হয়, তাহলে যেকোন সময় বিস্ফোরন ঘটতে পারে। হতে পারে হতাহত। আর তখন অযাচিত ঘটনার জন্য পুলিশ প্রশাসনকেই এর দায়-দায়িত্ব নিতে হবে।
তাই এখনই সময় এদেরকে নিয়ন্ত্রনের জন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং গৃহিত উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য কালক্ষেপণ না করে সম্বনিত অ্যাকশনে যাওয়া একান্ত উচিৎ বলে সচেতন মহল মনে করছেন।