কুরআন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। এর প্রতিটি আয়াত মুজিজার চেয়ে কম কিছু নয়, তা কেবল আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। বিজ্ঞানের মূল উৎস হলো কুরআন। কোরআনে এমন কিছু বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আছে, যা আজকের বিজ্ঞান গবেষকরা অকপটে স্বীকার করতে বাধ্য যে কুরআনই হলো বিজ্ঞানের মূল উৎস।
আল কুরআনে যেসব আয়াতে-
বিজ্ঞানে বর্ণনা রয়েছে
মাইক্রোস্কোপ আবিষ্কারের পর আজকের বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে প্রতিটি জীবের কোষের ৯০ শতাংশ পানি দিয়ে গঠিত। অথচ কুরআন ১৪০০ বছর আগেই সে তথ্য আমাদের জানিয়েছে।
লোহার আবিষ্কার মাটি থেকে
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে লোহার আবিষ্কার মাটি থেকে নয়, বরং তা আমদানি করা হয়েছে। বিজ্ঞান এখন প্রমাণ করেছে যে হাজার হাজার বছর আগে মহাকাশ থেকে একটি উল্কাপিণ্ড (গবঃবড়ত্রঃবং) পৃথিবীতে আঘাত হানে, যার কারণে পৃথিবীতে লোহা ছড়িয়ে পড়ে। অথচ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন : ‘এবং আমি সৃষ্টি করেছি লোহা, যার ভেতর আছে রণশক্তি এবং মানুষের জন্য বহুবিধ কল্যাণ।
আকাশ সুরক্ষিত ছাদ
বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে আকাশ আমাদের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। সূর্যের যে রশ্মি পৃথিবীর জন্য ক্ষতিকর, আকাশের স্তর (খধুবত্ং) সে ক্ষতিকর রশ্মিকে আটকে দেয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন : এবং আমি আকাশকে করেছি এক সুরক্ষিত ছাদ। ---(সুরা : আল আম্বিয়া, আয়াত : ৩২)
পাহাড় হলো কীলকস্বরূপ
এই পাহাড়-পর্বত পৃথিবীকে স্থির করে রেখেছে। যদি পাহাড়-পর্বত না থাকত তাহলে পৃথিবী এখানে-সেখানে দুলতে শুরু করত।
মহাবিশ্ব ক্রমবর্ধমান
বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বিংশ শতাব্দীতে এসে প্রমাণ করেছেন যে মহাবিশ্ব ক্রমাগত সম্প্রসারিত হচ্ছে। এর আগে বিশ্ব এই তথ্য সম্পর্কে কল্পনাও করতে পারেনি। অথচ এটি আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন ১৪০০ বছর আগেই। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন : ‘আমি আকাশ নির্মাণ করেছি আমার ক্ষমতাবলে এবং আমি অবশ্যই মহা সম্প্রসারণকারী।’ (সুরা : আজ-জারিয়াত, আয়াত : ৪৭)
সূর্য তার কক্ষপথে চলমান
ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত পৃথিবী বিশ্বাস করত যে সূর্য স্থির, গ্রহ এবং পৃথিবী তার চারপাশে ঘূর্ণায়মান। কিন্তু এই থিওরি ভুল প্রমাণিত হয়। এখন বিজ্ঞান বলছে সূর্যও তার কক্ষপথে ঘুরছে। অথচ কুরআন বহু আগেই এই থিওরি বলে দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন : ‘তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।’ (সুরা : আল আম্বিয়া, আয়াত : ৩৩)
কপালের মাধ্যমে মিথ্যা চিহ্নিত
এটি প্রমাণিত হয়েছে যে যখন কেউ মিথ্যা বলে, তখন তার কপালের দিকে মস্তিষ্কে একটি গভীর ভাবাবেগ (তবধষ) সৃষ্টি হয় এবং একটি লব (খড়নব) তৈরি হয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন : ‘সাবধান, সে যদি বিরত না হয় তবে আমি তাকে অবশ্যই হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাব, মস্তকের সম্মুখভাগের কেশগুচ্ছ ধরে। (তাহলো) মিথ্যাচারী, পাপিষ্ঠের কেশগুচ্ছ।’ (সুরা : আল আলাক, আয়াত : ১৫ ও ১৬)
ব্যথার রহস্য
ব্যথা অনুভব করার ক্ষমতা আমাদের পুরো শরীরজুড়ে। এটি ঊনবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত হয়েছিল, তার আগে বিজ্ঞান বলেছিল যে ব্যথা মস্তিষ্কের মাধ্যমে অনুভূত হয়। এখন এই তত্ত্ব ভুল প্রমাণিত হয়েছে। অথচ কুরআন ১৪০০ বছর আগেই এই থিওরি বলে দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন : ‘যখনই তাদের চামড়া জ্বলে সিদ্ধ হয়ে যাবে, তখন আমি তাদেরকে তার পরিবর্তে অন্য চামড়া দিয়ে দেব, যাতে তারা শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করতে পারে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাক্ষমতাবান প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা : আন নিসা, আয়াত : ৫৬)
অবশ্যই একজন মুসলিম হিসেবে এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয় যে আজ বিজ্ঞান যা আবিষ্কার করেছে ও করছে সবই ১৪০০ শতাব্দী আগেই কোরআন আমাদের তার সূত্র দিয়েছে। একই সঙ্গে আমাদের জন্য এটাও গর্বের বিষয় যে এই কুরআন আমাদের জন্যই নাজিল হয়েছে। আল্লাহ তাআলা এটিকে মানবজীবনের সম্পূর্ণ জীবন বিধান হিসেবে প্রেরণ করেছেন এবং আমাদের বলেছেন যে এতে (কোরআনে) চিন্তাশীল ও বিচক্ষণ মানুষের জন্য নিদর্শন রয়েছে।
কুরআন থেকে অমুসলিমদের আবিষ্কারকে শুধু স্বীকৃতি না দিয়ে আমরা যদি নিজেরা এগিয়ে যেতাম তাহলে কতই না ভালো হতো! আর যদি জ্ঞান-বিজ্ঞান গবেষণার জগতে এমন কাজ করে যেতাম, যার কারণে বিশ্ব কুরআন অধ্যয়ন করে একে অপরকে বলত যে দেখো! কুরআনে তাদের আল্লাহ মুসলিমদের যে নিদর্শন বলেছিলেন তা তারা আবিষ্কার করেছে।
আজকের বিশ্ব জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প-সংস্কৃতির একটি বিশ্ব। উন্নত বৈজ্ঞানিক বিকাশের বিশ্ব। যুগ-যুগান্তর ধরে মুসলিমরাই বৈজ্ঞানিক বিপ্লব ঘটিয়েছে কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো যে আজ আমরা আমাদের ঐতিহ্য-ইতিহাস ভুলে গিয়েছি এবং ছুড়ে ফেলে দিয়েছি। যার কারণে অমুসলিমরা এই ময়দানে এগিয়ে এসেছে। অথচ উচিত ছিল আমাদেরকে কুরআন গবেষণা করে বৈজ্ঞানিক বিপ্লব ঘটানো। তবে আজ মুসলমানরা জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা থেকে পিছিয়ে আসার ফলে সে শূন্যস্থান দখল করে সামনে এগিয়ে এসেছে ইহুদি-খ্রিস্টানরা। যার ফলে তারা বিপুল শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে সারা বিশ্বকে আজ শাসন করছে। তারা আজ ভাগ্য নিয়ন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ পাশ্চাত্যের এই জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রাগ্রসরতার পেছনে রয়েছে মুসলিম বিজ্ঞানীদের বিশাল অবদান।
younus / younus