পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করনে
বাজার মনিটরিং জোরদার করা জরুরী
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কে এম ইব্রাহিম খলিল
* কাচাঁ-পণ্য উৎপাদনকারী কৃষক/আমদানীকারক, সরবরাহকারী-পাইকার এবং খুচরা বিক্রেতা/ দোকানদারদের নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য একটি বিষয়
আমাদের দেশের বেশীরভাগ কৃষক তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্যের ন্যায্য-মূল্য পান-না, এটা আমরা সচেতন নাগরিকগণ ভালো করেই জানি। আমাদের দেশের কৃষক ভাইগণ, যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রোদ-বৃষ্টি-গরম মাথায় নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে কৃষিপণ্য ফলান; তারা মূলতঃ তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য-মূল্য থেকে বরাবর-ই বঞ্চিত থাকেন এবং সবচেয়ে বেশী অবলেহিত থাকেন প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক ভাইয়েরাই। এর কারণ অনেকগুলো; বিশেষতঃ সরকারের দায়িত্বশীল মহল বা কর্তৃপক্ষ। সরকারের ‘নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) এবং ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সাথে যারা কর্মরত আছেন, তারা সকলেই এর জন্য প্রধানতঃ দায়ী। বিশেষভাবে যারা বাজার মনিটরিং ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট বা দায়িত্বে আছেন, তারা এর জন্য বিশেষভাবে দায়ী। এর জন্য তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও সংশ্লিষ্টদের সাথে যথাযথ মনিটরিং এর দায়িত্ব পালন না করার জন্য দায়ী।
উভয়পক্ষ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করলে দেশের আপামর সকল জনগণ অবশ্যই এর সুফল পেতো। প্রান্তিক কৃষক ভাই-বোনগণ তারা কোন্ দরে পণ্য বিক্রি করবেন, সরবরাহকারীরা (পাইকার বা মধ্যস্বত্বভোগী বা আড়তধারীরা) কোন্ দরে ঐ পণ্য বিক্রি করবেন এবং খুচরা বিক্রেতারা কোন্ দরে ঐ পণ্য বিক্রি করবেন- এর জন্য মনিটরিং বিশেষ ভাবে দরকার। খুচরা দোকানীরা কোন্ জিনিসে কেজিতে কতো টাকা লাভ করবেন, এটা যদি বেঁধে দেয়া না যায়; তাহলে শক্তিশালী বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ কখনোই সম্ভব নয়। আমাদের জানামতে ক্রেতা-সাধারণকে জিম্মি করতঃ খুচরা দোকানীরা পাইকারী ক্রয় মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ মূল্যে এবং কখনো কখনো তিন/চার গুণ মূল্যেও পণ্য বিক্রি করে থাকেন। এসব অসাধু খুচরা বিক্রেতা বা দোকানীদেরকে কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে বাজার নিয়ন্ত্রণকারী মনিটরদেরকে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমাদের জানা ও দেখামতে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের কর্মীরা এক্ষেত্রে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না কিংবা তারা তাদের জন্য নির্ধারিত অবৈধ উৎকোচ বা বখরা নিয়ে না দেখার ভান করেন এবং চুপ থাকেন। ফলে সাধারণ জনতা এবং ভোক্তাগণের উপর এর চাপ এসে পড়ে। এতে সরকারের ইমেজ ক্ষুন্ন হয় এবং ভোক্তাগণ বিপাকে পড়ে। কাজেই খুচরা বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে কিংবা সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে না পারলে এর দায় সরকারেরই উপর বর্তায়।
আমাদের পরামর্শ প্রথমতঃ যদি নিরাপদ ও কার্যকর বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা না যায়, তাহলে খাদ্য মন্ত্রনালয়ের অধিণতঃ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ কিংবা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধিণতঃ ভোক্তা অধিদপ্তরের কাজ কী! তাহলে প্রতিষ্ঠান দু’টো থাকারই-বা প্রয়োজন কী! এ’দুটো প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে দেয়া দরকার এবং উচিৎ বলে আমাদের নিকট প্রতীয়মান। কাজেই সংশ্লিষ্ট যাদের উপর এ’দুটো প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে, তাদেরকে চাকুরীচ্যুত করতঃ আইনের আওতায় আনা দরকার। কারণ একটা দেশ এভাবে চলতে পারেনা। চাকরীকে যারা চাকরী মনে করে যথাযথ দায়িত্ব পালন করবেনা, তাদেরকে চাকরীচ্যুত করাই উচিৎ বলে আমরা মনে করি। দ্বিতীয়তঃ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদেরকে পার্ট-টাইম কর্ম-হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে সংশ্লিষ্ট ঐ টাকা ভাগ করে দিলে অত্যন্ত ভালো মানের সুফল পাওয়া যাবে বলে আমরা মনে করছি।
পাইকারদেরকে বিশেষ করে খুচরা বিক্রেতাদেরকে শক্ত হাতে মোকাবেলা করতে না পারলে প্রয়োজনে দমন করতে না পারলে ভোক্তা পর্যায়ে অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টির হবে এবং সামাজিক শৃংখলা নষ্টের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় অস্থিরতা বাড়তেই থাকবে। সরকারকে একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন যে, দেশের টেকসই উন্নয়ন করতে হলে খাদ্যে ভেজাল বন্ধের পাশাপাশি ঘুষ প্রথা চিরতরে বন্ধ করতে হবে। এটা খুবই জরুরী বিষয়। তা-না হলে আমাদের সোনার বাংলাদেশকে আধুনিক ও টেকসই মানবিক বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবেনা।
আমাদেরকে আরো একটি বিষয় মনে রাখা দরকার- আমরা সকলেই কোন-না-কোন ভাবে ক্রেতা বা ভোক্তা। বাজার ব্যবস্থার সাথে জড়িত নিরাপদ খাদ্য কর্তূপক্ষ (বিএফএস) এবং ভোক্তা অধিকারের ব্যক্তিবর্গও কোন-না-কোন ভাবে ক্রেতা বা ভোক্তা। কাজেই জাতীয়ভাবে আমরা সকলেই ক্রেতা বা ভোক্তা- এটিই চরম সত্য। তাই জাতীয় সমস্যার সমাধানের জন্য আমাদের সকলকেই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এবং তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
younus / younus