ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

দিশেহারা সাধারণ মানুষ!

নিত্যপণ্য কিনতে হিমশিম


নিজস্ব প্রতিবেদক photo নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৯-১০-২০২৪ দুপুর ১০:৪৪

* ডিমের দাম কমলেও মুরগির বাজার চড়া

নিত্যপণ্য কিনতে হাঁসফাঁস করছে সাধারণ মানুষ। গত সপ্তাহজুড়ে ১০০ টাকার কমে মেলেনি কোনো সবজি। ডিমের দাম ছিল রেকর্ড পরিমাণ। তবে সরকারের হস্তক্ষেপে ডিমের দাম কিছুটা কমলেও এবার বাজারে বাড়ছে মুরগির দাম।

সরকার নির্ধারিত দামের থেকে ব্রয়লার মুরগি ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আর সোনালি মুরগি ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। নিত্যপণ্যের এই বাড়তি দামের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। নিম্ন আয়ের মানুষ শুধু নয়, মধ্যবিত্তরাও এখন সংসার চালাতে কঠিন সময় পাড় করছেন।

গতকাল রাজধানীর খিলক্ষেত, বাড্ডা, রামপুরা এলাকার বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে সব ধরনের মুরগির দাম। ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ থেকে ২১০ টাকা। সোনালি মুরগির কেজি আগের থেকে বেড়ে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি হাইব্রিডের কেজি ২৭০ টাকা, দেশি মুরগি ৫২০ টাকা, লেয়ার লাল মুরগি ৩৩০ টাকা ও সাদা লেয়ার ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গত মাসে ডিম এবং ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকারি সংস্থা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এতে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি সর্বোচ্চ ১৮০ টাকা, সোনালি মুরগি সর্বোচ্চ ২৭০ টাকা ও ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১৪২ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এদিকে এক দিনের ব্যবধানে ডজনে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত  কমেছে মুরগির ডিমের দাম। তবে পাড়া-মহল্লার দোকানে ডিমের দাম এখনো বেশি। রাজধানীর খিলক্ষেত বাজারে দেখা যায়, ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা ডজন দরে বিক্রি হচ্ছে মুরগির ডিম। আকারে কিছুটা ছোট ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকা দরে। যদিও এক দিন আগেই এই দাম ছিল ১৭০-১৮০ টাকা।

এ ছাড়া কারওয়ান বাজারে খুচরা পর্যায়ে সাদা ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪৮ টাকায়, আর লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। সবজির বাজারে দেখা গেছে, বাজারে সবচেয়ে কম দামের সবজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। পটোলের কেজি ৬০ টাকা। এ ছাড়া ঢ্যাঁড়শ ৮০-৯০, বরবটি ১০০-১২০, গোলবেগুন ১৩০-১৪০, লম্বা বেগুন ১০০-১২০, টমেটো ১৮০-২০০, ধুন্দল, ঝিঙে ও চিচিঙ্গা ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কচুরমুখির কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা।

এ ছাড়াও বাজারে করলার কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, কাঁকরোল ১২০ টাকা, প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। বাজারে শীতকালীন সবজি শিমের কেজি ৪৮০ টাকা, ফুলকপি প্রতি পিস ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ছোট আকারের বাঁধাকপি ৮০ টাকা, গাজর ১৮০ টাকা ও মুলা ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লেবুর হালি ৩০ থেকে ৬০ টাকা। ধনেপাতার কেজি ৬০০ টাকা, কাঁচকলার হালি ৪০-৬০ টাকা, চালকুমড়া প্রতিটি ৬০-৮০ টাকা। বাজারে মিষ্টিকুমড়ার কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এদিকে কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ৩০০ টাকা দরে।

যদিও এখনো কিছু কিছু খুচরা দোকানি প্রতি এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) কাঁচা মরিচের দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকা হাঁকছেন। সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সর্বশেষ খুচরা বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বাজারে বর্তমানে পিঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। এক বছর আগে গত অক্টোবরে এ সময়ে দাম ছিল ৯০ থেকে ১০৫ টাকা। বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৬০ টাকায়। গত বছরের এ সময়ে আলু বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। বাজারে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ৩০০ টাকায়। গত বছরের এ সময়ে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ২০০ টাকায়।

বাজারে ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। গত বছরের এ সময়ে ছোলা বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৯৫ টাকায়। ভালো মুগডাল বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭৫ টাকা। গত বছরের এ সময় বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। ঢাকা চেম্বারের এক গবেষণায় দেখা গেছে, হাতবদলে পণ্যের দাম বাড়ে বহু গুণ। উৎপাদনকারী, দুই ধাপের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতার হাত ঘুরে দাম অস্বাভাবিকহারে বেড়ে যাচ্ছে। ডিম প্রতি পিস উৎপাদন খরচ ৮ টাকা ৪৬ পয়সা। বাজারে বিক্রি হয় ১২ টাকা ৪৬ পয়সায়।

আলুর উৎপাদন ১৭ টাকা ২১ পয়সা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫৪ টাকা ৩৮ পয়সা। হলুদ ৩৪ টাকা ৭৬ পয়সা উৎপাদন খরচ হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩২৩ টাকা ৩৮ পয়সা। আদা উৎপাদন ৬৪ টাকা ১৬ পয়সা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৫৭ টাকা ৫০ পয়সা। রসুন উৎপাদন ৫০ টাকা ৭৯ পয়সা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৯১ টাকা ২৩ পয়সা।

পিঁয়াজ উৎপাদন ২৭ টাকা ৭৩ পয়সা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯৪ টাকা। মসুর ডাল উৎপাদন ৪২ টাকা ৭৪ পয়সা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১৩ টাকা ১৩ পয়সা। এ ছাড়া ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন ১৩৩ টাকা ৬২ পয়সা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা ৩৮ পয়সা।

younus / younus