ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

প্রিয় নাবী

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রিয় খাবার


নিজস্ব প্রতিবেদক photo নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৯-১০-২০২৪ দুপুর ১২:৪৬

কে এম ইব্রাহিম খলিল

  • খেজুর-দুধ-মধুসহ যেসব খাবার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রিয় খাবার সমূহ
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি ও তাঁর পবিত্র জীবনধারা সর্বযুগে সবার জন্য অনুকরণীয়, অনুসরণীয়। তাঁর জীবনধারা, আচার-ব্যবহার সব কিছু আদর্শস্বরূপ। তিনি খাবার গ্রহণেও যথেষ্ট সতর্ক ছিলেন।
সর্বদা পুষ্টিকর, তরতাজা ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করতেন। তিনি বাসি খাবার পছন্দ করতেন না। তাঁর প্রিয় খাবারের তালিকায়ও আছে পুষ্টিকর খাবার। আজ আমরা তাঁর প্রিয় খাবারগুলো সম্পর্কে জানব, ঈণশা’আল্লাহ!।
খেজুর
আরববাসীর প্রধান খাদ্য খেজুর ও রুটি।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেজুর খেতে পছন্দ করতেন। খেজুর সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরা।
আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রাযি’আল্লাহু তায়া’লা আনহু থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বার্লির এক টুকরা রুটির ওপর একটি খেজুর রাখতে দেখেছি। তারপর বলেছেন, এটিই সালন-মসলা —(আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮৩০)।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, ‘যে বাড়িতে খেজুর নেই, সে বাড়ির অধিবাসীরা অভুক্ত —(আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮৩১)।খেজুরে আছে খনিজ লবণ, যা শরীর সতেজ রাখে। এ ছাড়া খেজুর আয়রনসমৃদ্ধ ফল। তাই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রসূতি মায়েদেরও খেজুর খেতে পরামর্শ দিয়েছেন। প্রসূতিদের রক্তের ঘাটতি পূরণে খেজুরের ভূমিকা অপরিসীম।
কিশমিশ
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আঙুর ও কিশমিশ খেতে ভালোবাসতেন। এগুলো কিডনির জন্য খুবই উপকারী। এ ফলে প্রচুর পুষ্টি উপাদান রয়েছে। কিশমিশ স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো। এর থেকেও আমরা শরীরের উপকারী শক্তি পেয়ে থাকি।ইবনে আব্বাস রাযি’আল্লাহু তায়া’লা আনহু বলেন, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য কিশমিশ ভিজিয়ে রাখা হতো এবং তিনি সেগুলো পান করতেন —(মুসলিম, হাদিস : ২০০৪)।

দুধ

দুধ একটি সুষম খাদ্য, যাতে সব পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে দুধ অতুলনীয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়মিত দুধ পান করতেন। দুধের উপকারিতা অনেক। ভালো ঘুম, হাড় মজবুত, ত্বক সুন্দর, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা প্রভৃতি কাজে সহায়তা করে দুধ।

আনাস রাযি’আল্লাহু তায়া’লা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘মিরাজের রাতে বায়তুল মাকদিসে আমি দুই রাকাত নামাজ পড়ে বের হলে জিবরাইল আলাইহিস সাল্লাম আমার সম্মুখে শরাব ও দুধের আলাদা দুটি পাত্র রাখেন। আমি দুধের পাত্রটি নির্বাচন করি। জিবরাইল আলাইহিস সাল্লাম বললেন, ‘আপনি প্রকৃত ও স্বভাবজাত জিনিস নির্বাচন করেছেন —(বুখারি, হাদিস : ৩১৬৪)।

মধু

মধু আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের বিশেষ নিয়ামতগুলোর একটি। এতে আরোগ্য আছে।

আম্মাজান আয়েশা রাযি’আল্লাহু তায়া’লা আনহা বলেন, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিষ্টান্ন ও মধু পছন্দ করতেন —(বুখারি, হাদিস : ৫১১৫; মুসলিম, হাদিস : ২৬৯৫)।

মধুর নানা পুষ্টি ও ভেষজ গুণ রয়েছে। এটি অনেক রোগের পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মধু হলো উত্তম ওষুধ —(বুখারি, হাদিস : ৫৩৫৯)।

সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতাও অনেক।

সারিদ (গোশত ও রুটি দিয়ে তৈরি খাবার)

সারিদ হলো গোশতের ঝোলে ভেজানো টুকরা টুকরা রুটি দিয়ে তৈরি বিশেষ খাদ্য। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সারিদ খেতে পছন্দ করতেন।

তিনি সারিদের প্রশংসা করে বলেন, ‘নারীদের মধ্যে আয়েশার মর্যাদা যেমন, খাদ্যের মধ্যে সারিদের মর্যাদা তেমন —(বুখারি, হাদিস : ৫৪২৮)।

পনির

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাযি’আল্লাহু তায়া’লা আনহু থেকে বর্ণিত, তাবুকের যুদ্ধে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে কিছু পনির উপস্থাপন করা হয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘বিসমিল্লাহ’ পড়ে একটি চাকু দিয়ে সেগুলো কাটেন এবং কিছু আহার করেন —(আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮১৯)।

ঘি মাখা রুটি

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাযি’আল্লাহু তায়া’লা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন বলেন, ‘যদি আমাদের কাছে বাদামি গমে তৈরি ও ঘিয়ে সিক্ত সাদা রুটি থাকত, তাহলে সেগুলো আহার করতাম।’

অতপর আনসারি এক সাহাবি এই কথা শুনে এ ধরনের রুটি নিয়ে আসেন —(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩৪০)।

জয়তুন

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা জয়তুন খাও এবং জয়তুনের তেল গায়ে মাখো। কেননা এটি একটি পবিত্র বৃক্ষ থেকে তৈরি —(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১০০৩; তিরমিজি, হাদিস : ১৮৫১)।

সিরকা

জাবের রাযি’আল্লাহু তায়া’লা আনহু বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর পরিবারের কাছে সালন কামনা করেন। তাঁরা বলেন, আমাদের কাছে তো সিরকা ছাড়া আর কিছু নেই। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে সেগুলো নিয়ে আসা হলে তিনি তা থেকে খেতে শুরু করেন এবং বলেন, ‘সিরকা কতই না উত্তম সালন! সিরকা কতই না উত্তম সালন!’ জাবের রাযি’আল্লাহু তায়া’লা আনহু বলেন, ‘সেদিন থেকে আমি সিরকা পছন্দ করতে শুরু করি —(মুসলিম, হাদিস : ২০৫১)।

লাউ

আনাস রাযি’আল্লাহু তায়া’লা আনহু থেকে বর্ণিত, একবার একজন দর্জি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে খাওয়ার দাওয়াত করেন। আমিও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে সেই দাওয়াতে অংশ নিই।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সামনে বার্লির রুটি এবং গোশতের টুকরা ও কদু (লাউ) মেশানো ঝোল পরিবেশন করা হয়। আমি দেখেছি, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্লেট থেকে খুঁজে খুঁজে কদু নিয়ে খাচ্ছেন। আর আমিও সেদিন থেকে কদুর প্রতি আসক্ত হয়ে উঠি —(বুখারি, হাদিস : ৫০৬৪)।

তরমুজ

তরমুজ মিষ্টিজাতীয় ফল। গরমের দিনে তরমুজ খেলে শরীর ঠাণ্ডা থাকে। আয়েশা রাযি’আল্লাহু তায়া’লা আনহা থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তরমুজের সঙ্গে রাতাব (পাকা তাজা খেজুর) খেতেন —(বুখারি, হাদিস : ৫১৩৪)।

শসা

শসা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। এটি শরীর ঠাণ্ডা রাখে। শরীরের অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট দূর করে। আবদুল্লাহ ইবনে জাফর রাযি’আল্লাহু তায়া’লা আনহু থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে শসার সঙ্গে ‘রাতাব’ খেতে দেখেছি —(মুসলিম, হাদিস : ৩৮০৬)।

খাসির পায়া

আয়েশা রাযি’আল্লাহু তায়া’লা আনহ‍া থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা ছোট খাসির পায়া রান্না করতাম। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোরবানির ১৫ দিন পরও সেগুলো খেতেন —(বুখারি, হাদিস : ৫১২২)।

মোরগ

জাহদাম রাযি’আল্লাহু তায়া’লা আনহু থেকে বর্ণিত, একদিন আবু মুসা একটি মোরগ নিয়ে আসেন। ফলে উপস্থিত একজন গলার স্বর ভিন্ন করে আওয়াজ করল। আবু মুসা জিজ্ঞেস করলেন, কী হলো তোমার?

লোকটি বলল, মোরগকে আমি বিভিন্ন খাবার খেতে দেখে আমার অপছন্দ হওয়ায় শপথ করেছি, কোনো দিন মোরগ খাব না।

আবু মুসা তাঁকে বললেন, ‘কাছে আসো। খাওয়ায় অংশগ্রহণ করো। কারণ আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে মোরগ খেতে দেখেছি। আর তুমি তোমার শপথ ভঙ্গের কাফফারা আদায় করে দেবে —(বুখারি, হাদিস : ৫১৯৮,৪৬৬২)।

খরগোশের গোশত

আনাস ইবনে মালেক রাযি’আল্লাহু তায়া’লা আনহু থেকে বর্ণিত, মাররুজ জাহরান নামক স্থানে আমাদের পাশ দিয়ে একটি খরগোশ লাফিয়ে পড়ে। দৃশ্য দেখে আমাদের সঙ্গীরা খরগোশটিকে ধাওয়া করে, কিন্তু তারা সেটিকে পাকড়াও করতে না পেরে ক্লান্ত ও ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে।

তবে আমি ধাওয়া করে এর নাগাল পাই এবং ধরে হজরত আবু তালহার কাছে নিয়ে আসি। তিনি মারওয়া নামক স্থানে সেটি জবাই করেন। এরপর খরগোশটির ঊরু ও নিতম্ব আমাকে দিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে পাঠান। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেগুলো ভক্ষণ করেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, রাসুল কি তা খেয়েছিলেন? তিনি বলেন, গ্রহণ করেছিলেন —(বুখারি, হাদিস : ২৪৩৩)।

সামুদ্রিক মাছ

সামুদ্রিক মাছে প্রচুর আয়োডিন থাকে, যা শরীরের জন্য খুব দরকারি। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সামুদ্রিক মাছ পছন্দ করতেন। এ বিষয়ে আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ রাযি’আল্লাহু তায়া’লা আনহু-এর একটি দীর্ঘ হাদিস রয়েছে।

হাদিসের শেষাংশে মাছ খাওয়ার বৈধতা নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘খাও। এটি তোমাদের জন্য রিজিক, আল্লাহ পাঠিয়েছেন। আর তোমাদের কাছে কিছু অবশিষ্ট থাকলে আমাদেরও খাওয়াও। মাছটির কিছু অংশ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে এনে দেওয়া হলো। তিনি তা খেলেন —(বুখারি, হাদিস : ৪৩৬২)।

লেখকঃ জয়েন্ট এডিটর, কলামিস্ট

younus / younus