ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাব

বরিশাল বিভাগে কৃষি ও মৎস্য খাতে ৭২৫ কোটি টাকার ক্ষতি এবং১ হাজার ৭৯২ হেক্টর জমির পান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে


নিজস্ব প্রতিবেদক photo নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৯-৬-২০২৪ দুপুর ১১:৫৫

ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস ও অতিবৃষ্টিতে বরিশাল বিভাগের কৃষি ও মৎস্য খাতে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের করা ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, বিভাগের ছয়টি জেলায় কৃষি খাতে ক্ষতি হয়েছে ৫০৮ কোটি টাকা। এছাড়া মৎস্যসম্পদের ক্ষতি ২১৭ কোটি টাকার বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১ লাখ ৮০ হাজার কৃষক ও লক্ষাধিক মৎস্য খামারি। তবে কৃষিতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রণোদনা দেয়ার পাশাপাশি কৃষককে আগাম চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।

বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলায় কৃষক আউশ ধান, চিনাবাদাম, মরিচ, মসুর ডাল, মুগ ডাল, তিল, পাট, কলা, পেঁপে, ঝিঙা, ঢেঁড়শ ও পানসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেছিল ১ লাখ ৮৬ হাজার ৪৭৯ হেক্টর জমিতে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে বেশির ভাগ সবজিই নষ্ট হয়ে গেছে। পুরো কৃষি অঞ্চলেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে এমন ক্ষত। অনেক জমির ফসল এখনো পানির নিচে। যেখানে পানি নেমে গেছে, সেখানে ফসল কাদার সঙ্গে মিশে আছে।

বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বলছে, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কৃষিতে ক্ষতির পরিমাণ ৫০৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারের মধ্যে প্রান্তিক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষক রয়েছেন ১ লাখ ৮০ হাজারের মতো। আর বিভাগে ৯০ হাজার ৭৯৮ হেক্টর ফসলি জমির আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২ হাজার ৭৮৯ হেক্টর জমি।

এছাড়া আংশিক থেকে ১৫ হাজার ৪৮৯ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সব মিলিয়ে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ১৮ হাজার ২০৯ হেক্টরে দাঁড়াতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে আউশ (বীজতলা ও আবাদসহ), চিনা বাদাম, মরিচ, মুগ, তিল, সবজি, পাট, পান, কলা, পেঁপেসহ বিভিন্ন ফল রয়েছে। উৎপাদনে ক্ষতির পরিমাণ ১ লাখ ৬৯ হাজার ৭৬৭ টন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শুধু বরিশাল জেলায় ২ হাজার ৯৮৭ হেক্টর জমিতে পানের বরজ রয়েছে। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার ৭৯২ হেক্টর জমির পান। ৮৯৬ হেক্টর জমির পান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

তারা বলছেন, মোটের ওপর শুধু পান উৎপাদনেই ক্ষতির পরিমাণ ৬ হাজার ২৭২ টন হতে পারে। বরিশাল জেলায় প্রায় নয় হাজার পানচাষী পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. শওকত ওসমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কৃষকের এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমন মৌসুমে বিশেষ প্রণোদনা দেয়া হবে। চাষাবাদও আগাম করা হবে। যাতে কৃষক দ্রুত ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে জোয়ারের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায়। আগে দুর্যোগের সময় প্রবেশ করা পানি দ্রুত নেমে যেত, এবার পানি না নামায় কৃষিতে বিপর্যয় হয়েছে। গত বছর নভেম্বরেও ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে এ অঞ্চলের কৃষক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’

দিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ৯৩ হাজার ৮৮২ পুকুর, দীঘি ও ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বিভাগের পুকুর, ঘের, স্লুইস গেটের মতো অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে ৩১ কোটি ৪২ লাখ টাকার। আর মৎস্যসম্পদের ক্ষতির পরিমাণ ২১৭ কোটি টাকার বেশি। খামার, পুকুর, দীঘি ও ঘেরের ক্ষতির কারণে ৭ হাজার ৯২ টন মাছের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ১৫৯ টন চিংড়ি, প্রায় ৭ কোটি পোনা ও ৬৯ টন কাঁকড়া, কুচিয়ার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।

younus / younus